তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা – শহীদ কাদরী

ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী
গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে
মার্চপাস্ট করে চলে যাবে
এবং স্যালুট করবে
কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
বন-বাদাড় ডিঙ্গিয়ে
কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে
আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে
ভায়োলিন বোঝাই করে
কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো-
বি-৫২ আর মিগ-২১গুলো
মাথার ওপর গোঁ-গোঁ করবে
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো
প্যারাট্রুপারদের মতো ঝরে পড়বে
কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা।

ভয় নেই…আমি এমন ব্যবস্থা করবো
একজন কবি কমান্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী
এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায়
সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা!

সংঘর্ষের সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ হবে যাবে-
আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক
অনায়াসে বিরোধীদলের অধিনায়ক হয়ে যাবেন
সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বৎসর
লাল নীল সোনালি মাছি-
ভালোবাসার চোরাচালান ছাড়া সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, প্রিয়তমা।

ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে
শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন
আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে
গণচুম্বনের ভয়ে
হন্তারকের হাত থেকে পড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা।

ভয় নেই,
আমি এমন ব্যবস্থা করবো
শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমণের মতো
অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতে-বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে,

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
স্টেটব্যাংকে গিয়ে
গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে
একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।
ভয় নেই, ভয় নেই
ভয় নেই,
আমি এমন ব্যবস্থা করবো
নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী
কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে
নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।

ভূমিহীন কৃষকের গান – হেলাল হাফিজ

দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?

বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।

মাত্র ইঞ্চি দুই জমি চাই

এর বেশী কখনো চাবো না,
যুক্তিসঙ্গত এই জৈবনিক দাবি খুব বিজ্ঞানসম্মত
তবু ওটুকু পাবো না
এমন কী অপরাধ কখন করেছি!

ততোটা উর্বর আর সুমসৃণ না হলেও ক্ষতি নেই
ক্ষোভ নেই লাবন্যের পুষ্টিহীনতায়,
যাবতীয় সার ও সোহাগ দিয়ে
একনিষ্ঠ পরিচর্যা দিয়ে
যোগ্য করে নেবো তাকে কর্মিষ্ঠ কৃষকের মত।

একদিন দিন চলে যাবে মৌসুম ফুরাবে,
জরা আর খরায় পীড়িত খাঁ খাঁ
অকর্ষিত ওলো জমি
কেঁদে-কেটে কৃষক পাবে না।

অহংকার – হেলাল হাফিজ

বুকের সীমান্ত বন্ধ তুমিই করেছো
খুলে রেখেছিলাম অর্গল,
আমার যুগল চোখে ছিলো মানবিক খেলা
তুমি শুধু দেখেছো অনল।
 
তুমি এসেছিলে কাছে, দূরেও গিয়েছো যেচে
ফ্রিজ শটে স্থির হয়ে আছি,
তুমি দিয়েছিলে কথা, অপারগতার ব্যথা
সব কিছু বুকে নিয়ে বাঁচি।
 
উথাল পাথাল করে সব কিছু ছুঁয়ে যাই
কোনো কিছু ছোঁয় না আমাকে,
তোলপাড় নিজে তুলে নিদারুণ খেলাচ্ছলে
দিয়ে যাই বিজয় তোমাকে।

চোখে এখন আর জল আসেনা-রেদোয়ান মাসুদ

চোখে এখন আর জল আসেনা
কত কাদি, কত একা বসে থাকি
কিন্তু কান্নার আর শেষ হয় না
কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে গেছে জলের রাশি
তাইতো এখন আর রোমাল দিয়ে চোখ মুছতে হয় না।।

তোমাকে হারানোর কথা এখন আর মনে করতে হয় না
চোখের সামনে সবসময়ই ভাসে তোমার ছবি
যে ছবি এখন আর রং তুলি দিয়ে আকতে হয় না
হৃদয়ের ঝরানো সে রক্ত দিয়ে আকা
তাই শুধু শুধু এখন আর কাগজ তুলি নিয়ে বসে থাকতে হয় না।।

গাছের ডালে এখন আর পাখি ডাকে না
পৌষ মাসেও পাতার ডগায় নিশি জমে না
নদীর বুকে এখন মরুভূমি বাসা বেধেছে
যা তোমার সাথে এখন বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে
তাইতো নদীর সেই কলকল সূর এখন আর কানে আসেনা।।

শত চেষ্টার পরেও এখন আর গান শুনতে পারি না।
কারন বনের পাখি এখন আর গান গায় না
ফুলের বাগানেও এখন আর গন্ধ পাই না
ভোমরাও নাকি তাই এখন আর ফুলের বাগানে আসে না
তাইতো নাক কান এখন আর খোলা রাখতে হয় না।।

সাগরে নাকি এখন অনেক ঢেউ ওঠে
কিন্তু সেই ঢেউ এখন আর হৃদয়ে দোলা দেয় না
কারন আকাশে এখন অনেক মেঘ জমে আছে
আর সেই মেঘ পৃথিবীটাকে অন্ধকার করে রেখেছে
তাইতো হৃদয়ে এখন আর বৃষ্টির ছোয়া লাগে না।।

চোখের পাতা এখন আর বুজাতে হয় না
সারাক্ষন চেয়ে থাকে
এখন আর বার বার বলতে হয় না
আর একটু জেগে থাক, একটু পরে ঘুমাও
এভাবেই জেগে থাকি।।

কারো সামনে এখন আর কান্না লুকাতে হয় না
ভিতরে কষ্ট থাকলেও বাইরে দেখা যায় না
কি হয়েছে তোর? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় না
কারন, চোখে এখন আর জল আসেনা
তাইতো রোমাল দিয়ে এখন আর চোখ মুছতে হয় না।।